somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প- পীনোন্নত বক্ষ

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা একঃ
মল্লিকা আর মালাইকা অদ্ভূত রকমের মায়াবী দুই বান্ধবি। দুজনেই দারুন চ্যালেন্জ নিতে ভালোবাসে। মল্লিকা মালাইকাকে বলে-মেয়েদের সৌন্দর্য্য কীসে -চোখে না মুখে না বুকে।
মালাইকা বলে- তোর কি হুমায়ুন আহমেদের একটা কথা মনে আছে-মেয়েদের সৌন্দর্য্য নিয়ে। তিনি বলেছিলেন-
হরিন সুন্দর চোখে, আর নারী সুন্দর বুকে।

আরে না- মল্লিকা বলে -সংস্কৃত শ্লোক থেকে-
লম্বা গ্রীবা,পীনোন্নত বক্ষ, অক্ষি যদ্যপ হরিণী
বক্র অংগ,চিকন কায়া যার, সেই রমনীয় রমনী।

হুমায়ুন আযাদ বলেছিলেন-কবিরা হলো এক ধরনের ভন্ড, এরা মেয়েদের চোখের প্রশংসা করে কিন্তু সব পুরুষরাই বুক পছন্দ করে।

ঘটনা দুইঃ
কল্লোল সুদীর্ঘ একমাস ফ্রান্সের কর্সিকা শহরে চিত্র প্রদর্শনী শেষে আজ দেশে ফিরে। লাগেজ ট্রলি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। যেই না নিজের লাগেজটা লাগেজ বেল্ট থেকে নামাতে যাবে-দেখে নিজের খালি ট্রলিটা নিয়ে অন্য একটি মেয়ে চলে যাচ্ছে। কল্লোল-কিছু বলতে গিয়েও বললো না। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে কল্লোল গাড়ীর অপেক্ষায় আছে। দেখে সেই মেয়েটাও পাশে দাঁড়ানো।
কল্লোলের চোখ চলে যায়-মেয়েটির চোখের দিকে। কী অপূর্ব মায়াকাড়া চোখ।আর সবচেয় সুন্দর মেয়েটির পীনোন্নত বক্ষ। কল্লোল চোখ সরাতে পারেনা।

ঘটনা তিনঃ
কল্লোল বাসায় এসে কোন কিছুতেই মন বসাতে পারেনা। একটা মেয়ের চোখ এতো মায়াকাড়া হয় কি করে, চোখ যেন বলে কী যেন নেই, কী যেন নেই। আর বুক যেন বলে না থাকার কিছু নেই।পুরুষমনের নিউরনে কামনার পেরেক টুকে দেয়ার যা দরকার তার সবই আছে। কল্লোল কোনোদিন নিজেকে এতো বেশি নার্ভাস মনে করেনি। রাত বাড়তে থাকে।আর কল্লোল পুড়তে থাকে। শেষে ফোন করে। ওপাশ থেকে শোনা যায় দারুন এক আবেদনময়ী স্বর। কল্লোল আর মল্লিকার ঘনিষ্টতা বাড়তে থাকে। মল্লিকা বলে তুমি এতো পাগল হলে কেন? কী দেখে এতো মুগ্ধ হলে?
আমার মুগ্ধতা কীসে আমি তোমাকে মুখে বলবোনা, কাল পহেলা বৈশাখ।প্রথম সূর্যালোকের ভোরে রমনার বটমূলে এসো। কল্লোল সারা রাত জেগে ছবি আঁকে। নিজের আঁকা ছবি দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায়।

ঘটনা চারঃ
নববর্ষের প্রথম প্রহরে কল্লোল ভালোবাসার বিশুদ্ধ টিপ পরিয়ে দেয় মল্লিকার কপালে।সারাদিন ভালোবাসায় বিকশিত হয় দুজনের মাঝে। সুবাসিত আঘ্রাণ ভালোবাসার আবেশে আবেশিত করে দুজনাকে। বিদায় মুহুর্তে কল্লোল নববর্ষের উপহার ধরিয়ে দেয় মল্লিকাকে। বলে- বাসায় গিয়ে দেখো।
মল্লিকা বাসায় ফিরে। নিজের ঘরে গিয়ে ধীরে ধীরে আভরণ খুলে নিজের, কল্লোলের দেয়া ছবির। তারপর ছবির পানে চেয়ে থাকে। কী অদ্ভূত সুন্দর করে আঁকা এক মোহনীয় রমনীর এক আভরিত নগ্ন বক্ষ।মল্লিকা আয়নার সামনে যায়। বক্ষ বন্ধনি আলগা করে। অপরুপ রুপের দিকে চেয়ে থাকে।তারপর চোখ দিয়ে দুফোটা অশ্রু ঝরে পড়ে।

ঘটনা পাঁচঃ
মল্লিকা আর কল্লোলের বিশুদ্ধ স্বর্গীয় প্রেম দেখে আমরা অশুদ্ধ মানুষেরা একটু শুদ্ধ হই। তারপর এক শুভদিনে মল্লিকা আর কল্লোলের বিয়ে হয়।বিয়ের এক সপ্তাহও হয়নি।সেদিন ছিলো খুব সুন্দর একটা দিন।ঝড়ো মেঘ হয়নি। আকাশে বজ্রপাত হানা দেয়নি। তবে ভেঙগে গেলো মল্লিকা আর কল্লোলের সংসার।মল্লিকা ফিরে গেলো নিজের ভুবনে। কল্লোল ছেড়ে দিলো সংসার, পুড়িয়ে দিলো সব আঁকা ছবি।কল্লোলের ঘনিষ্ট বন্ধু রুপম বারবার কল্লোলের কাছে যায়। জিগ্গাসা করে কেন এমন হলো। এতো ভালো মেয়ে, এতো লক্ষী মেয়ে,কেন সংসার হলোনা। কল্লোল শত প্রশ্নে কিছুই বলেনা , শুধু বলে- মল্লিকা আমার সাথে প্রতারণা করেছে। নিদারুন প্রতারণা।

ঘটনা ছয়ঃ
রুপম মল্লিকার সব কথা শুনে। কান্না ধরে রাখতে পারেনা। মল্লিকা সুদীর্ঘ এক বছর আমেরিকায় ছিলো। ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারে তার মাসটেকটমি হয়।সফল অপারেশন। কিন্তু অপরুপা মল্লিকা নিদারুন শুণ্যতায় ভোগে।বুকের ভিতর হাহাকার করে ওঠে।মল্লিকার হৃদয়ের গোঙগানি বুঝতে পারেন,বিশ্বসেরা প্লাস্টিক সার্জন ডাঃ থমপসন। তিনি বাম স্তনের সাথে সামন্জস্য রেখে অবিকল নকল ডান স্তন বসিয়ে দেন মল্লিকার বুকে।রুপম মল্লিকার চোখের অশ্রু জামার আস্তিন দিয়ে মুছে দেয়।

ঘটনা সাতঃ
আজ আবারো পহেলা বৈশাখ। কল্লোল বুঝতেই পারেনি কেমন করে যেন পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে ছয়টি বছর।একাকিত্বের যন্ত্রণা আর কতো সহ্য করা যায়।বৈরাগ্য জীবন বয়ে বেড়ানো যে আরো কষ্টের। সুদীর্ঘ সৈকতের বেলাভূমিতে কল্লোল আবারো তুলে নেয় তুলি। স্বপ্নের রঙতুলি দিয়ে ক্যানভাসে জীবন্ত করতে থাকে ছবি।এমন সময় ছুটে আসে একটি ছোট খুকি।রঙীন পোষাক পরা ছোট মেয়েটি দেখতে যেন ঠিক রঙীন প্রজাপতির মতো।
খুকিটি কল্লোলের আঁকা ছবি দেখে বলে- আপনি কি আঁকেন?
কল্লোল বলে- আমি ছবি আঁকি।
খুকি- আপনার আঁকা ছবি দেখতে তো অবিকল আমার মায়ের মতো।খুকি বলে চলেন-আপনাকে আমার মায়ের সাথে পরিচয় করে দেই।আমার আরেকটি বোন আছে। আমার যমজ বোন।ওর সাথেও পরিচয় করিয়ে দেব।

কল্লোল -মল্লিকা আর রুপমকে দেখে। দেখে রুপমের হাত দিয়ে ধরা আরেকটি মেয়ে ঠিক খুকিটির মতো।

ঘটনা আটঃ
রুপম কল্লোলকে বলে -তুমি যে কারণে মল্লিকাকে ছেড়ে দিলে আমি সেই কারণেই মল্লিকাকে গ্রহণ করলাম আমার জীবন সাথী হিসাবে।একটা মেয়ের জীবন পূর্ণতা আসে কীসে? মাতৃত্বে। নারীর জন্য মাতৃত্বের চেয়ে বড় অর্জন আর বড় পূর্ণতা অন্য কিছুতেই নেই। মল্লিকা নিজে মা হয়েছে-দুটো ফুটফুটে সন্তানের। নিজের বুকের স্তনে ওদের বড় করেছে। এর চেয়ে চির প্রশান্তিময় বড় সৌন্দর্য্য নারীর জন্য আর কি হতে পারে। মানুষের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, শারীরক বাহ্যিক অবয়ব বুড়ো হয়ে যায়, কিন্ত মন থাকে চির নবীন, চির সজীব । যদি তেমন করে রাখা যায়।আর মনের চেয়ে বড় সৌন্দর্য্য যে কিছুতেই নেই।

(ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত পৃথিবীর সব দুঃখি নারিদের উৎস্বর্গ করা হলো।)

Mastectomy- A surgical operation to remove a breast.



ওপরের ছবিটি একজন ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলা। ওপরের গল্পটি লিখার মূল অনুষঙগ এবং আমার বন্ধুর বলা একটি বাংলা ছবির গল্প।


( উপরে উদৃত হুমায়ুন আহমেদের কথা শুনে সমালোচনা করে হুমায়ুন আজাদ পত্রিকায় লিখেছিলেন - হুমায়ুন হলো বাজারি সস্তা লেখক। আর ওর নাটকগুলো তো আমার বাড়ির কাজের ছেলেমেয়েরাই বেশি পছন্দ করে, কোনো ভদ্র লোক দেখেনা। এর কিছুদিন পর এক অনুষ্ঠানে হুমায়ুন আজাদ আর হুমায়ন আহমেদ একি সাথে আমন্ত্রিত। অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে হুমায়ুন আহমেদ ওঠে গিয়ে হুমায়ুন আজাদকে বললেন- স্যার আগামি সপ্তাহ থেকে বিটিভিতে আমার নতুন নাটক প্রদর্শণ করবে। নাটকের নাম হলো- আজ রবিবার। আপনার বাসার কাজের ছেলেমেয়েদের বলবেন-নাটকটি দেখার জন্য।ওরাতো আর পত্রিকা পড়তে পারেনা। তাই আপনি যদি বলেন- তাহলে আমার একটু উপকার হয়।)

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:০৬
৩২টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×